মধ্যবঙ্গ নিউজ, বহরমপুরঃ মুর্শিদাবাদে সংগঠনের হালচাল দেখার জন্য সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কালীঘাটে তৃণমূলের দলীয় বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁকে সহযোগিতা করবেন মোশারফ হোসেন। শুক্রবার ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে তৃণমূলের রাজ্য সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি করেছেন তৃণমূল দলনেত্রী।
বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী একসময় মুর্শিদাবাদে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তৃণমূলের ওই পদ বিলুপ্ত হলেও শুভেন্দুর দলবদলের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না হলেও বকলমে মুর্শিদাবাদের ‘পর্যবেক্ষক’ করা হয়েছিল মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে।
সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল তৃণমূলের বিরুদ্ধে গিয়েছে সদ্য। সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখর। এই সময় সেই সংখ্যালঘুদের মন পেতে ফিরহাদের পাশাপাশি রাজ্যের গণশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাকে জুড়ে দেওয়া হল কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যে কানাঘুষো শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার শাসকদলের অন্দরে।
সিদ্দিকুল্লা দায়িত্ব পাওয়ায় তৃণমূলের একাংশ নেতা কর্মীর অনুমান আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। অন্য আর একটি অংশ এখনই মন্তব্য করতে নারাজ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, ভবিষ্যতে মুর্শিদাবাদ জেলা ভাগ হবে। সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত জঙ্গিপুর জেলাকে পাখির চোখে রাখতে চাইছেন মমতা। তাই আগেভাগে সেই রাস্তায় হেঁটে সেখানকার সংখ্যালঘুদের ঐক্যবদ্ধ করতে চাইছেন তিনি। পাশাপাশি বর্তমানে তৃণমূলের মূল সংগঠন দু’ভাগ হলেও শাখা সংগঠন হিসেবে সংখ্যালঘু সংগঠন এখনও একটা। সেই সংগঠনেও এখন গোষ্ঠী কোন্দল চরমে উঠেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে যা দলকে অস্বস্তিতে রেখেছে। সেই কোন্দলে রাশ টানতে “বহিরাগত ও কট্টর ” সিদ্দিকুল্লাকেই ভরসা করেছেন তৃণমূল দলনেত্রী। নিজেদের বৃত্তে নেতারা এমন আলোচনা করলেও প্রকাশ্যে মুখ খুলে ” কাঁটা ” হতে চাইছেন না সংখ্যালঘু নেতারাও। সকলেই সময়ের ওপর ফলাফল ছাড়তে চাইছেন।
সাংগঠনিক রদবদলের পাশাপাশি সূত্রের দাবি, এদিনের বৈঠকে মুর্শিদাবাদের নেতাদের কিঞ্চিত ধমক দিয়েছেন মমতা। সূত্রের দাবি, মুর্শিদাবাদের নেতাদের কাছে বিশেষ করে দুই সাংসদ আবু তাহের খান ও খলিলুর রহমানের কাছে এদিন মমতা ভোটে হারার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে নেতারা প্রার্থী পছন্দ না হওয়ার কথা বললে দিদি তাতে আমল দেননি। তিনি বলেন, সাগরদিঘির মানুষদের জন্য এত কিছু করলাম তবু মন পেলাম না কেন? মমতা সরকারের আমলে সাগরদিঘিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে গতি এসেছে। কাশ্মীরে নিহত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেও এদিনের বৈঠকে দাবি করেছেন ‘দিদি’। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাতে এই ফলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিয়ে ও বৈঠকে দিদি “চোখ রাঙিয়েছেন” বলে দাবি সূত্রের। তবে অন্য বৈঠকের তুলনায় এদিনের বৈঠকে “দিদির সুর ছিল নরম”। বসন্তের বৃষ্টির মতো এদিন যা স্বস্তি দিয়েছে মুর্শিদাবাদের নেতাদের। বৈঠক থেকে বেরিয়ে আবু তাহের বলেন, ” দিদি যা জানতে চেয়েছিলেন তা জানিয়েছি। পঞ্চায়েত ভোটে যাতে দলের ফল ভাল হয় তা দেখতে বলেছেন দিদি।” জঙ্গিপুর সংগঠনের চেয়ারম্যান কানাই মন্ডল বলেন, ” দিদি নরমে গরমে বুঝিয়েছেন আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাগরদিঘি থেকে শিক্ষা নিতে হবে বলেও এদিন দিদি জানিয়েছেন।”