দেবনীল সরকার :হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালাকে মনে আছে। যে শহরের রাস্তায় বাঁশি বাজিয়ে শহরকে ইঁদুরমুক্ত করেছিল। ইনি তেমন বাঁশিওয়ালা না হলেও শহরের মানুষ তাঁকে রাস্তায় বাঁশি বাজাতে শুনে, তাঁর সুরের জাদুতে, ব্যস্ত রাস্তাতেও থমকে দাঁড়িয়ে যান মাঝেমাঝেই। ঘারে একটা দণ্ডে সাজানো রঙবেরঙের বাঁশি। নিজের হাতে বাঁশ দিয়ে বাঁশি তৈরি করেন, বাঁশি বাজান ও বিক্রি করেন আসলাম খান।
কান্দি থেকে বাসে করে রোজ শহরে আসেন বছর ৬০ এর আসলাম। এখানে এসে বিভিন্ন দিনে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাঁশি বাজিয়ে, পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান তিনি। দিনে কমবেশি ৩০টি বাঁশি বিক্রি করে সন্ধ্যায় আবার কান্দি ফিরে যান তিনি।
কান্দির অধিবাসী নন আসলাম। বিহারের পূর্ণিয়া জেলার ছোট্ট গ্রাম আলিনগর সেখানেই ভিটে বাড়ি তাঁর। সেখানে রয়েছে মেয়ে, বউ, পরিবার। কান্দিতে এক বন্ধুর ছোট্ট ঘরে একা থাকেন আসলাম। এই ঘরে নিজের হাতে বাঁশ কেটে বাঁশি বানান তিনি।
আসলাম মাসে একবার যান দেশের বাড়ি বিহারে। সেখানে রয়েছে তাঁর মেয়ে বানো খাতুন। আসলাম হিন্দিভাষী হলেও ব্যবসার খাতিরে বাংলাভাষাও বেশ রপ্ত করেছেন। তিনি বলেন, বাড়িতে তাঁর মেয়ে আছে। বিয়ে ঠিক হয়েছে মেয়ের। লাখ তিনেক টাকা প্রয়োজন। অনেকদিন যাননি বাড়ি। টাকা রোজগার করে ফিরবেন দেশে।
কান্দিতে এক বন্ধুর বাড়ির ছোট্ট ঘরে থাকেন আসলাম। নিজের রান্না নিজেই করে খান। শিলিগুড়ি থেকে বাঁশ আসে, সেই বাঁশ কিনে, তা দিয়ে বাঁশি বানান তিনি। সেই বাঁশি নিয়ে শহরের রাস্তায় ফেরি করেন। প্রায় ১০ বছর ধরে এই কাজ করছেন তিনি। এখন বয়স হচ্ছে, জোর কমছে শরীরের কিন্তু তাতে কি! সুরের জাদুতে শহরের রাস্তায় যেন এক চলতি কনসার্ট করছেন বিহারের আসলাম খান।