এখন খবরমধ্যবঙ্গ নিউজপরিবেশবিনোদনহেলথ ওয়াচখেলাঘরে বাইরেলাইফস্টাইলঅন্যান্য

যে গামছায় পুজো, সেই গামছাতেই ইমান রক্ষা, ৪০ বছর ধরে বহরমপুরে গামছা বিক্রি করছেন ডোমকলের সিরাজুল

Published on: October 11, 2022

দেবনীল সরকারঃ বহরমপুরঃ  সারাদিন ধরে সাইকেলের পিছনে গামছার পসরা সাজিয়ে, ফেরি করে বেড়ান ডোমকলের সিরাজুল ইসলাম। পুজো শেষ, দোকান বাজারের অবস্থা একটু হলেও খারাপ। কিন্তু চিন্তা কি আমি তো ফেরিওয়ালা ! দিনে ২০০ টাকা রোজকার হলেই আমি খুশি, সাইকেল চালাতে চালাতে বলেন সিরাজুল।

ডোমকলের দক্ষিণনগর থেকে বাসে করে গামছার বান্ডিল বেঁধে আনেন তিনি। বাস থেকে নামেন চুনাখালি নিমতলার মোড়ে। ওখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকে তাঁর ‘জগদ্দল’ , ২৫ বছরের পুরনো একটি সাইকেল। যা দেখলে মনেই হবে না ওর এত বয়স, সাইকেলটিকে খুবই যত্ন করেন সিরাজুল। সেইটের পিছনে গামছার বান্ডিল বেঁধে নিয়ে বহরমপুরের রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বছর ৫৫ – র সিরাজুল ইসলাম।

কাঠফাটা দুপুর হোক বা মেঘভাঙা বৃষ্টি! সিরাজুল রোজই আসেন বহরমপুর। ছবিঃ ময়ূরেশ রায়চৌধুরী

কাঠফাটা দুপুর হোক বা মেঘভাঙা বৃষ্টি! সিরাজুল রোজই আসেন বহরমপুর। এই অভ্যাস তাঁর অনেকদিনের পুরনো। সকাল পাঁচটায় বাড়ির কাজ সেরে, স্ত্রীকে রান্নার সব যোগান করে দিয়ে স্নান-খাওয়া সেরে ৬টাই বাসে চাপেন। এখানে সকালে পৌঁছে শুরু করেন ব্যবসা। সাইকেলে করে শহরের অলিতে গলিতে ফেরি করা, গলা ফাটিয়ে হাঁক দেন “ গামছা আছে ভালো গামছা! বেলডাঙা, শান্তিনিকেতন, বাঁকুড়ার গামছা…” । অবসন্ন দুপুরে শহরের কোনো ফাঁকা রাস্তার মোড়ে গামছা নিয়ে দেখা যায় সিরাজুলকে।

সিরাজুল ইসলাম সব  ধর্ম কেই সমান চোখে দেখেন তিনি। তিনি বলেন “ আমার গামছা পুজোর কাজেও লাগে। আবার ইসলাম ধর্মের অনুষ্ঠানে  এই গামছাই কেনেন অনেকে।  আমার ইমান মুসলমান হলেও জাতে তো এ মানুষই। আর মানুষ হয়ে সব মানুষের উৎসবে সামিল হতে না পারলে আমার জীবন বৃথা”। তিনি আরও বলেন, “পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারিনি তবে মানুষ হবার শিক্ষা ছোট থেকেই পেয়েছি।”

সিরাজুল সারাদিন গামছা বেচে সন্ধ্যায় আবার যথাস্থানে নিজের জগদ্দলকে রেখে, বাসে চেপে বাড়ি ফেরেন। বাসে গামছার বান্ডিল তুলে বসার জায়গা পান না তিনি। হয় বাসের ছাদে নয়তো পিছনে ঝুলতে ঝুলতে। আক্ষেপ করে বলেন, “৩০- ৪০ বছর ধরে এই রুটের বাসে যাতায়াত করছি। কিন্তু কাজ সেরে ঘেমে যখন বাসে উঠি কেউ বসার জায়গা দেয় না”। পুরোনো কথা স্মৃতিচারণ করে সিরাজুল বলেন, আমাদের যখন কম বয়স ছিল আমরা বাসে জায়গা থাকেলও দাঁড়িয়ে  আসতাম। বয়স্কদের বসতে দিতাম। তবে এখন দিনকাল পালাচ্ছে।

মানুষ হিসাবে, প্রতিনিয়ত একটি চর্চার মধ্যে থাকেন সিরাজুল। কীভাবে সবচেয়ে কম চাহিদায় খুশি থাকা যায়, তা সিরাজুলের থেকে শিক্ষণীয়। “ ঘাম ঝড়িয়ে পরিশ্রম করে, টাকা কামানোতেই আমার শান্তি। আমি টাকা কমানোর মেশিন হতে চাই না। দিনে ২০০ টাকা রোজকার হলেই আমি খুশি ”। সাইকেল চালিয়ে চলে যেতে যেতে বলে যান সিরাজুল।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now