দেবনীল সরকারঃ রানীনগর থেকে বাইকে করে স্ত্রীকে নিয়ে বহরমপুরে জেলা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরে এসে ছিলেন অর্জুন মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী রাখী মণ্ডল। একজন নিজে আলকাপ শিল্পী, আছে আলকাপের দল। অন্যজন বাঁচিয়ে রেখেছেন চাঁই বিয়ের গান।
মুর্শিদাবাদের রানীনগরের গোরাইপুর হিন্দুপাড়া গ্রামের আলকাপ শিল্পী অর্জুন মণ্ডল। তাঁর দলের নাম ‘তিনমূর্তি আলকাপ সংস্থা’। পাঁচ জনের দল নিয়ে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলকাপ পালা করেন তাঁরা। সাথে থাকেন স্ত্রী রেখা মণ্ডল। তিনিও একজন শিল্পী, গায়িকা। চাঁই বিবাহ গীতি পরিবেশন করেন তিনি। চাঁই উপজাতিদের নিজস্ব উপভাষায় বিয়ের সময় গান গাওয়া, এখানকার একটি আঞ্চলিক রীতি।
আলকাপ পালা আর চাঁইদের বিয়েতে গান করে সংসার চালান এই লোকশিল্পী দম্পতি। ৪০ বছরের অর্জুন বলেন, “ গানের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছোট থেকেই। আগে মনসামঙ্গল পালা, বুলানগান সহ গ্রামে ঘুরে ঘুরে নানারকম লোকগান করেছি বিভিন্ন দলে। তবে এই অঞ্চলে আলকাপের চাহিদা আছে। তাই বছর পাঁচেক আগে একটা আলকাপের দল খুলি তিন বন্ধু মিলে।নাম দিয়ে ‘তিনমূর্তি আলকাপ সংস্থা’।”
স্ত্রী রাখী মণ্ডলের বয়স ৩৭, তিনি গান করেন চাঁইদের বিয়েতে। সে বিয়ের গানও খুব মজার। নিজেদের উপভাষায় লেখা প্রাচীন গান গুলি সুর দিয়ে ঢোল, নাল, খঞ্জরী বাজিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়। অনুষ্ঠানের একসপ্তাহ আগে থেকে সন্ধ্যায় জোর কদমে চলে রিহার্সাল। রাখী দেবীর গানের দলে ৫ জন সদস্য আছেন। তারা সবাই চাঁই ভাষার গানে পটু। এলাকার বিয়েতে ডাক পড়ে রাখীদেবী ও তাঁর দলের।
গান করেই দিন চলে এই চাঁই পরিবারের। মাসে ২ – ৩ টে আলকাপ পালার শো করেন তারা। বাইরেও শো করতে যান, পাঁচ – ছয় রাত ব্যাপী চলে সেই অনুষ্ঠানগুলি। মাঝে মাঝে সরকারী অনুষ্ঠানেও গান করতে যান এই লোক শিল্পীরা। শীতের মরশুমে বেশি শো হয়। আলকাপ পালা করে মাসে ৬০০০ এর বেশি আয় হয়না। কোনও মাসে তাও হয়না। বছরের অন্য সময়ে জমিতে চাষের কাজেও হাত লাগান এই দম্পতি।
রাখী বলেন, “ চাঁই ভাষার গান প্রায় উঠেই যাচ্ছে। আমরা কটা দল আছি জেলায়।” সরকারী অনুষ্ঠানেও গিয়েছেন এই চাঁইগীতি পরিবেশনের জন্য কিন্তু সেখানে এই ভাষা সেরম কেউ বোঝেন না তাই জনপ্রিয় বাংলা, হিন্দি গানও তুলে রাখতে হয়। শ্রোতাদের চাহিদা মতো পরিবেশন করেন।
বৃহস্পতিবার অফিসে ছিল নিজেদের লাইফ সার্টিফিকেট দেখানোর কাজে। রাজ্য সরকার থেকে লোকশিল্পী খাতে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা পান এই শিল্পীরা।