এখন খবরমধ্যবঙ্গ নিউজপরিবেশবিনোদনহেলথ ওয়াচখেলাঘরে বাইরেলাইফস্টাইলঅন্যান্য

মুর্শিদাবাদের ‘দোস্তজী’ দিশা দেখাচ্ছে বাংলা সিনেমার!

Published on: November 25, 2022

দেবনীল সরকারঃ  বেশ কয়েকদিন ধরে, সিনে মহলে ঘোরাফেরা করছে একটাই নাম ‘দোস্তজী’। ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ও তার প্রেক্ষাপটে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মুর্শিদাবাদের একটি ছোট্ট গ্রামের দুই বন্ধুর গল্প ‘দোস্তজী’। পরিচালক প্রসূন চ্যাটারজি ৭ বছর ধরে ছবিটি তৈরি করেছেন। ছবিটি শ্যুট করেছেন তুহিন বিশ্বাস। যিনি পেশায় একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। এই সিনেমাটি আদতেই সিনে ইন্ডাস্ট্রির কোনও কর্মী ছাড়াই তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদের মাটিতে।

পরিচালক বলেছেন, ছবির খসড়া থেকে চিত্রনাট্য সবই তিনি লিখেছেন ও পরিকল্পনা করেছেন মুর্শিদাবাদের এই গ্রামে বসেই। ছবির চরিত্ররা যেহেতু গ্রাম্য এবং এই ছবির ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদী কথ্য বাংলার ধরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেহেতু ছবির সাথে সৎ থাকার জন্যই মুর্শিদাবাদের এই অঞ্চল থেকে অভিনেতাদের খুঁজে এনেছেন তিনি। ছবির কলাকুশলী সহ প্রায় সবাই এই নদীয়া, মুর্শিদাবাদ অঞ্চলেরই বাসিন্দা। পরিচালকের শৈশব ও বেড়ে ওঠার সময়ের মধ্যেও গ্রাম বাংলার প্রভাব যথেষ্ট। তাই প্রায় আট বছর ধরে তিলে তিলে ছবির বিষয়, সেটির মেজাজ, সেই অনুযায়ী ছবির রঙ, আবহ কী হতে পারে এসব নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে ছবিটি বানিয়েছেন তিনি।

ছবিতে মূল ধারার বানিজ্যিক ছবির কোন উপাদান সেই অর্থে নেই, টেকনিক্যালিটিজ ছাড়া। ছবিতে ক্যামেরার কাজ অনবদ্য। ছবির রঙ যদিও সাদাকালো নয়, তবুও এই ছবিতে একটি বিশেষ রঙের ব্যবহার তিনি করেছেন যা চোখকে এক অদ্ভূত প্রশান্তি দেয়। এই ছবিতে আবহ নির্দেশনার কাজ করেছেন পরিচালক নিজেই। ছবির আবহে রয়েছে পুরনো বাংলা ছায়াছবির গান (যা রেডিওতে চলছে বিভিন্ন সময়ে), কিছু স্থানীয় ভাষণ ও ধর্মীয় প্রার্থনা (নামাজ)। যা এই ছবির প্রেক্ষাপট ও সময়কে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এই ছবিতে নিস্তব্ধতাকে বিশেষভাবে ব্যবহার করেছন পরিচালক। যা থেকে তাঁর নিপুণতার পরিচয় পাওয়া যায়।

২০১৭ – ১৮ সালে মুর্শিদাবাদের ডোমকল এলাকায় শ্যুটিং হয়েছে দোস্তজী’র। ছবিটি সিনেমা হলে রিলিজ করেছে ২০২২ সালের ৪ঠা নভেম্বর। এই দীর্ঘ সময়ের দুর্গম যাত্রাপথ পেরিয়ে আজ দোস্তজী সারা বিশ্বে সিনে প্রেমীদের চর্চার বিষয়। ছবিটি দেশ বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে, পেয়েছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মান। যা ছবিটিকে নিয়ে এসেছে প্রচারের আলোয়।

টানা ১৪ দিন ধরে কলকাতা সহ জেলার হল গুলিতে হাউসফুল শো চলছে দোস্তজী’র। বিগত ৫ বছরের বাংলা ছবির ইতিহাসে সিনেমা হলে এই উত্তেজনা বাঙালি দর্শক দেখেনি। শেষ দশকের বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র গুলির মধ্যে পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের ছবি ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ই হোক বা মানস মুকুল পালের ‘সহজ পাঠের গপ্পো’, বাংলা ছবিতে গ্রাম বাংলার ছবি তুলে ধরতে পরিচালকরা উদ্যোগী হয়েছেন। চেনা আঙিনার বাইরে গিয়ে ছবির গল্প বা থিম নির্বাচন করেছেন তাঁরা। কোনও মূল ধারার বানিজ্যিক অভিনেতা ছাড়াই শুধুমাত্র গল্প বলার নিজস্ব ভঙ্গির জোড়ে দর্শকের মনোগ্রাহী হয়েছে এই ছবিগুলি। তবে এই ছবির গল্প ও তার সম্পাদনায় পরিচালকের গ্রাম বাংলাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ছবিটিকে বাংলা ছবির একটি মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আপাতত ৮ বছরের দীর্ঘ যাত্রাপথের পর ছবির সাফল্যে খুশি ‘দোস্তজী’ সাথে যুক্ত সবাই। এখন ‘দোস্তজী’ নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত পরিচালক ও কলাকুশলীরা। আগামীতে এই পরিচালক কী ছবি নিয়ে হাজির হবেন এরপর সেটাই দেখার।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now