বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী লড়াইয়ের সাফল্যে চাই আন্তরিকতা

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ, বহরমপুরঃ মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে সিপিএমের ঘোড় দৌড় থামিয়েছিল জোড়াফুল, ২০১১তে। তারপর সারা রাজ্যের সঙ্গে মুর্শিদাবাদেও সিপিএম তথা বামফ্রন্টের ভোট বাক্স ক্ষয়েছে সময়ের তালে তালে। জোট করেছে কংগ্রেসের সঙ্গে। ২০১৬ সালে সেই জোট মেনে নিতে পারেননি নিচু তলার কর্মীরা। কিন্তু মত বদলায় ২০২১এ। সেবার মেরুকরণের রাজনীতিতে বামেরা শূন্য হাতেই ক্ষ্যান্ত থাকেন। সারা রাজ্যে সেবার সিপিএম(আই) ভোট পেয়েছিল ৪.৬ শতাংশ। এরপর কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন ও পুরসভা নির্বাচন হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। তাহেরপুর পুরসভা অক্সিজেন জুগিয়েছে আলিমুদ্দিনকে। মুর্শিদাবাদে সিপিএম(আই)-এর জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলছেন, “ একুশে আমরা জেলায় ২৫ শতাংশের ধারে কাছে ভোট পেয়েছিলাম। তারমধ্যে ডোমকলে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলাম।” কত মানুষ তাঁদের সঙ্গে সেই সময় ছিলেন সেই ‘নিঁখুত’ হিসেব তাঁরা এখনও করতে পারেননি বলেই জানালেন জামির। তখন থেকে বাম কর্মীরা প্রকাশ্যে কংগ্রেস বিরোধিতা করেননি। ওপরতলা যেমন বলেছে নিচের তলা তেমনভাবে চলার চেষ্টা করেছে। অন্তত লাল ঝান্ডাকে জিইয়ে রেখেছেন কর্মীরা। সমর্থন জুগিয়েছে মানুষও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভোট বাক্সে তার প্রভাব পড়েনি।
অথচ, সিপিএমের যুবরা করোনা কালে মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছে হাওয়া টেনেছিল নিজেদের জানলায়। সেই হাওয়ায় সিপিএমের বড়রা শ্লাঘা বোধ করেছিলেন। পুরভোটে এক আধটা আসন পাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। নির্বাচনের পর নেতাদের অনেকেই দাবি করেছিলেন “ ভোট লুঠ না হলে এক আধটা পুরবোর্ড আমরাও পেতাম এই জেলায়।” কিন্তু সেই ভোটেই বহরমপুর পুরসভায় ছ’টি আসন কংগ্রেস নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছিল। কর্মীদের ভরসা দিতে পেরেছিল। বামেরা তাঁদের সমর্থন করেই খুশি হয়েছিল। অথচ কংগ্রেস ভোট মিটতে একবারও তাদের নাম উচ্চারণ করে না। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই নয়া ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সিপিএমের অন্দরে।
আর সেই ক্ষোভের আবহেই সাগরদিঘির উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করে পথে নামল বামফ্রন্ট। অথচ এই আসনে কংগ্রেস না কি একপেশে ভাবেই প্রার্থী দিয়েছে। প্রার্থী বাছা থেকে ঘোষণা পর্যন্ত কোনও আলোচনাই বামেদের সঙ্গে অধীর চৌধুরী করেননি বলে একাধিক নেতা পার্টির ভেতরে দাবি করেছেন। ফ্রন্টের অন্য শরিকদের এই নির্বাচনের প্রচারে দেখা না গেলেও সিপিএম(আই)এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে জোট প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচারে দেখা গিয়েছিল সাগরদিঘিতে। কিন্তু এই কংগ্রেসের সঙ্গে বলা ভাল অধীর চৌধুরীর সঙ্গে সেলিমের ‘একুশে’ দূরত্ব কিন্তু ঘোচেনি, দাবি পর্যবেক্ষকদের। যে সাগরদিঘিতে ৩৪ বছর সিপিএম রাজত্ব করেছিল সেই সাগরদিঘিতে তারা এবার ‘ব্রাত্য’ বলে মত তাঁদের। বাম সমর্থক দেবজ্যোতি বিশ্বাস মনে করেন, “ সিপিএম বিজেপি-তৃণমূলকে ঠেকাতে এই মূহুর্তে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু কংগ্রেসের কাছ থেকে সিপিএমের প্রতি সেই আন্তরিকতা পাওয়া যাচ্ছে না। কংগ্রেস যদি ওপর ওপর সমর্থন করে তাহলে এই লড়াইটা দুর্বল হবে। তাতে সিপিএম কতটা দুর্বল হবে সেটা পরের কথা। সাময়িকভাবে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী লড়াই দুর্বল হবে।” জামির বলেন, “ কংগ্রেস আমাদের নাম নিলো না কি নিলো না সেটার থেকেও আমাদের কাছে জরুরি বিজেপি ও তৃণমূলের মত দুই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঠেকানো। মানুষকে বাঁচানো।”
আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঠিক হয়ে যাবে সাগরদিঘি কার দখলে থাকবে। কংগ্রেসের ঘর বারান্দায় যে আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে কংগ্রেস বিধানসভায় তাঁদের খাতা খুলতে পারবে। সিপিএমের প্রত্যক্ষ লাভ হবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে জোটের দর বাড়াতে পারবে বলে ধারণা সিপিএম(আই)এর। জামির অবশ্য বলছেন, “ এই আসনে জোট প্রার্থী জিতলে সাধারণ মানুষ বুঝবেন তৃণমূলকে ঠেকানো যায়। এই সত্যিটা প্রতিষ্ঠা পাবে।”
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই নির্বাচনেও জোটের পথে হাঁটবে সিপিএম(আই)। তাতেও কি লাভ হবে সিপিএমের। বামপন্থায় বিশ্বাসী অধ্যাপক অজয় অধিকারী বলছেন, “ বৃহত্তম স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতম স্বার্থ ত্যাগ করা উচিত সে কথা বাম কর্মীরাও জানেন।” তিনি বলেন, “ এই মূহুর্তে তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী একটি বিকল্প শক্তির প্রয়োজন রাজ্য ও দেশে। ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি রাজনীতি কখনও দু-পাঁচ বছরের জন্য হয় না। এই তৃণমূল যাঁদের কোনও মতাদর্শ নেই তাঁরা বড়জোর দশ বছর টিকে থাকবে। তারপর? সেদিক থেকে সিপিএম(আই)-এর কংগ্রেসের একটা মতাদর্শ আছে। রাজনীতেতে প্রয়োজন লম্বা রেশের ঘোড়া। এই ভারতবর্ষকে বদলাতে এই রকম একটি বিকল্প শক্তির দরকার হবে।” অজয়বাবুও বলেন, “ কংগ্রেস যদি সিপিএম(আই)এর সমর্থনে শক্তিশালী হয় ও তাদের সমর্থনকে অস্বীকার করে তাহলে লড়াই দুর্বল হবে। কংগ্রেসকেও একদিন হারিয়ে যেতে হবে।” তবে “ অর্থ-পেশি শক্তির বর্তমান ভোট সর্বস্ব রাজনীতিতে।” সেই একই হিসেবে কাল ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ফল জানা যাবে। এই জোট সংঘবদ্ধ হলে দৃঢ় হলে আগামীদিনে এই লড়াই জেতা অসম্ভব নয় বলেও মনে করেন বাম সমর্থকরা।