মধ্যবঙ্গ নিউজ, বহরমপুরঃ পাঁচদিন কেটে গেল। এখনও খোঁজ নেই বহরমপুরের কাজী নজরুল শিশু আবাসের ১১ জন কিশোরের। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ওই শিশুদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি হোম কতৃপক্ষের। বহরমপুর থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ ও দায়ের হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার সুরিন্দর সিং বলেন, ” নিঁখোজ কিশোরদের এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাঁদের খোঁজ পেতে সম্ভাব্য সব জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”
নিঁখোজ হওয়া শিশুদের বিষয়ে খোঁজ নিতে সোমবার ওই সরকারি শিশু আবাস পরিদর্শন করেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা সমিতির চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়। তিনি ও তাঁর সঙ্গী অন্য আধিকারিকরা হোম কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। খোঁজ খবর নেন নিঁখোজ কিশোরদের সম্পর্কে। সূত্রের দাবি, নিঁখোজ ১১ জনের মধ্যে একজন পড়ুয়া আগেও হোম থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে হাওড়া স্টেশন থেকে তাকে উদ্ধার করে রেল পুলিশ। ফের ওই কিশোর সহ আরও দশজন কিশোর নিঁখোজ হওয়ায় উদ্বিগ্ন হোম কতৃপক্ষ।
তবে এই কিশোরদের নিঁখোজ হওয়ার প্রসঙ্গে রাজ্যের চেয়ারপার্সন কিছু না বললেও ওই কিশোরদের স্কুলের নিরাপত্তার গলদকেই দায়ি করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলা শিশু সুরক্ষা সমিতির চেয়ারপার্সন সোমা ভৌমিক। পুলিশ শিশুদের খুঁজে আনতে আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করে সোমা বলেন, ” ওই শিশুদের হোম থেকে স্কুলে নিয়ে আসা ও হোমে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর কর্তব্যে কোনও গাফিলতি ছিল না। কিন্তু প্রথম পিরিয়ডের পর যে স্কুল থেকে পাঁচিল টপকে পড়ুয়া পালিয়ে যায় সেই স্কুল শিশুদের নিরাপত্তার প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারে না।”
মুর্শিদাবাদ জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শুভদীপ গোস্বামী বলেন, ” নিঁখোজ কিশোরদের ছবি রাজ্যের থানাগুলিতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তবে যদি ওই পড়ুয়ারা স্কুলের অতবড় সীমানার অত উঁচু প্রাচীর টপকে চলে যায় তাহলে স্কুল কতৃপক্ষের উচিত আরও কড়া নজরদারি রাখা। ”
শিক্ষার অধিকার আইনে হারিয়ে যাওয়া ১১ জন কিশোর হোমের পাশের কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলে পড়াশোনা করতো। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মলয় বিশ্বাস বলেন, ” আমরা দায় এড়াচ্ছি না। পুলিশকে সহযোগিতা করছি। তবে শুধু আমাদের স্কুলের কেন রাজ্যের কোনও স্কুলেই এই ধরনের পড়ুয়াদের জন্য আলাদা কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। হোম কতৃপক্ষের উচিত এই বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা।”
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অরুনিমা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সেভেন এইটের পড়ুয়াদের এটা বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময় এরা রোল মডেল খোঁজে। কেউ বাবার মতো, কেউ মায়ের মতো বা ওই ধরনের কারোর মতো সে হতে চায়।” তিনি আরও বলেন, ” সেই রোল মডেল বা হিরো ফিগার না পেলে এদের নানান রকম মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয় তাদের মনে। নানা ধরনের নেশায় তারা আসক্তও হয়ে পরতে পারে। বাবা মায়ের ছায়ায় শিশু কিশোররা বড় হয়, যাঁরা তাদের কথা শোনে বোঝায়। সেই ছায়া থেকে এই ধরনের হোমের শিশুরা বঞ্চিত হয়। হোম কতৃপক্ষ সহানুভূতিশীল হলে সেখানেই বাড়ির পরিবেশ পাওয়া যায়। আর তা না হলে জীবনটা গন্ডির মধ্যে বড় হতে থাকলে মনের খিদে মেটে না ওই কিশোরদের। তখন সেই গন্ডি ভাঙার মানসিকতা জন্মায় আর তার থেকেই এই ধরনের পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটায় এরা।”
এর আগেও এই সরকারি হোম থেকে শিশু পালানোর ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশব্যাপী নিঁখোজ হওয়া শিশুদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া শিশুর মধ্যে ৯৬.৪ শতাংশ শিশু উদ্ধার হয়েছে এই রাজ্য। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সমযকালে সারা দেশে মোট নিখোঁজ শিশুর সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ১০ হাজার ৬৮২ জন। যার মধ্যে বাংলায় নিখোঁজ হওয়া শিশুর সংখ্যা ছিল ২৬,৪৫৯ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর মধ্যে ২৫ হাজার ৫০৮ জন শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সারা দেশের নিরিখে যা মাত্র ১২ শতাংশ।