নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুরঃ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শর্ত না কি ২০১৬ থেকে চলে আসা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা? কোন সমীকরণে ভরসা রাখবেন মুর্শিদাবাদের বাম কংগ্রেস নেতা কর্মীরা? ধন্দে পড়েছেন দুই দলের কর্মীরা। সমর্থকরাও ধোঁয়াশায়। নেতারা আউড়াচ্ছেন তত্ব, কর্মীরা খুঁজছেন আস্থা। মনেপ্রাণে ছাত্র অবস্থা থেকে সিপিএম করেন বহরমপুরের সুদীপ্ত চৌধুরী। কিন্তু পার্টিতে নাম লেখানো তো দূর অস্ত কোনও দিন জেলা কার্যালয়েই ঢুঁ মারেন নি তিনি। এহেন সমর্থক বলছেন, ” মুশকিল হল ভোটটা কাকে দেব। ২০১৬ সাল থেকে মনের এই অবস্থা। কংগ্রেসকে ভোট দিতে হবে। অথচ ওই দলকে মন থেকে মানতে পারি না। তবুও এর আগে দলের কথা ভেবে ভোট দিয়েছি। কিন্তু এবার যদি বলে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে? “এইরকম হলে সুদীপ্ত ভোট দিতেই যাবেন না বলে ঠিক করেছেন। বারণ করবেন পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। সুদীপ্তর মতো এমন কংগ্রেস সমর্থকও আছেন বহরমপুরের আনাচে কানাচে। তাঁরা বলছেন তৃণমলকে হারাতে সব তো মানলাম। এবার নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে? এটা তারা মানতে পারছেন না।
লোকসভা ভোট হতে এখন ও বেশ কয়েকমাস হাতে আছে। এখনও নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করেনি ‘ইন্ডিয়া’। পাশাপাশি ক্ষমতা না পেলেও সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভালো ফল করেছে বাম ও কংগ্রেস। রাজ্যের একাধিক জায়গায় পঞ্চায়েতে ক্ষমতা পেয়েছে জোট। কোথাও কোথাও নিজেরা একক ক্ষমতাও পেয়েছে। মুর্শিদাবাদে ও এককভাবে চারটি পঞ্চায়েত পেয়েছে বামেরা। কংগ্রেস পেয়েছে ১০টি। কংগ্রেসের সমর্থনে জেলায় ১২টি পঞ্চায়েতের ক্ষমতা পেয়েছে বামেরা। তেমনি বামেদের সমর্থনে জেলার ৩১টি পঞ্চায়েত পরিচালনার ভার পেয়েছে কংগ্রেস ও। সেই ফল ধরে রাখতে চলতি মাস থেকেই স্থানীয় বিষয় ধরে ধরে এলাকাভিত্তিক কর্মসূচি নিচ্ছে সিপিএম। লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনও কোনও কর্মসূচি নেয়নি কংগ্রেস। কিন্তু দুই দলের নেতারাই চাইছেন মুর্শিদাবাদে বজায় থাকুক বাম কংগ্রেস জোট। জঙ্গিপুরের কংগ্রেস নেতা হাসানুজ্জামান বলছেন ” এ ব্যপারে দলের পক্ষে কথা বলবার প্রকৃত লোক আমি নই। তবে তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী বাম কংগ্রেস জোট যেন আমাদের জেলায় অন্তত লোকসভাতেও থাকে তাই চাইব।”
রবিবার সিপিএমের রাজ্য নেতারা দলের বর্ধিত অধিবেশন শেষে জানিয়েছেন তাঁরা আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাঁদের শরিক ও জোট সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলবেন। সেখানে তৃণমূল সঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার দিকেই জোর দিয়েছেন রাজ্য নেতারা। সেই পথেই রয়েছেন জেলা নেতারা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ” তৃণমূল বিরোধী যে দল আছে। আমরা তাঁদের নিয়েই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে এ জেলায় লড়াইয়ে নামব। ” কংগ্রেসের জেলা মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ” ইন্ডিয়া হল ২৬টি কেন্দ্রীয় কমিটির জোট। সেখানে আমরাও আছি। বাংলার প্রসঙ্গেও আমাদের সর্বস্তরের নেতারা ঠিক করবেন কী হবে না হবে। এটাও মনে রাখতে হবে অনেক রাজ্যে কংগ্রেস ও বাম মুখোমুখি লড়াই করে। কিন্তু যখন ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়নি তার আগে থেকেই এই রাজ্যে বাম কংগ্রেস একসঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সেই জোট লোকসভাতেও বজায় থাকবে।” সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া’ ঘিরে এই দুই দলের কেন্দ্র নেতাদের তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ওঠা বসার ছবি সংবাদ মাধ্যমে সামনে এসেছে। তাতেই ধন্দে পড়েছেন দুই দলের কর্মী সমর্থকরা। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গিয়েছিল জোট। সে তথ্য উসকে দিয়ে তৃণমূল নেতা অশোক দাস বলেন, ” যে সমীকরণেই ওরা এবার নির্বাচনে নামুক না কেন অধীর চৌধুরীর বিসর্জন এবার নিশ্চিত।”